নামহীন ভালোবাসা


বৃষ্টির এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যা। কলেজ ক্যাম্পাসের করিডর তখন প্রায় ফাঁকা। পেছনের মাঠে কেবল বৃষ্টির জল জমে ছোট ছোট লেক তৈরি হয়েছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ঋত্বিক—একটা পুরনো গল্পের বই হাতে, ছাতাটি বন্ধ করে পাশে রাখা। তার চোখে খেলা করছে অপেক্ষার অভ্যাস।


ঠিক তখনই ভিজতে ভিজতে আসছে অনন্যা—গা ছুঁয়ে পড়ছে শাড়ির ভাঁজ, চুল ভেজা, কপালে জলের বিন্দু। সে কিছু না বলে সোজা চলে এল ঋত্বিকের সামনে।


“তুমি তো রোজ বলো, ভালোবাসো। আজ বলো না তো… যদি আমি কাল না আসি?”—অনন্যার কণ্ঠে একটু কাঁপুনি, একটু অভিমান।


ঋত্বিক তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে কাছে এসে, কপালের জলের ফোঁটা ছুঁয়ে বলে—


“ভালোবাসি মানে তো শুধু বলা নয়, অনন্যা।

তুমি ক্লাসে ঢুকলে আমি নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলি, তুমি না থাকলে আমার ঘড়ির কাঁটা চলতেই চায় না। তুমি জানো? যেদিন তোমায় প্রথম দেখি, আমি বুঝে গেছিলাম, এই মেয়েটাই আমার সমস্ত ঋতুর গল্প।”


অনন্যার চোখ ভিজে যায়, কিন্তু এবার বৃষ্টিতে নয়।


সে নীচু গলায় ফিসফিস করে,

“তোমায় পেয়ে গেছি বলেই হয়তো আজ বৃষ্টি এত সুন্দর লাগে।”


ঋত্বিক এবার ধীরে ধীরে তার হাতটা ধরে, যেন ধরা পড়ে যাচ্ছে অনেক দিনের স্বপ্নটা। তারপর বলে—

“তুমি চাইলে আকাশের বৃষ্টি থেমে যাবে। চাইলে গ্রীষ্মেও আমার বুকের মাঝে শীত পড়বে। তোমার জন্য আমি নামহীন থেকে গিয়েছি এতদিন। চলো, এবার আমাদের গল্পটাকে একটা নাম দিই?”


অনন্যা একটু হেসে বলে,

“না… নাম দিলে হারিয়ে যাবে। এমনই থাক।

নির্বাক ভালোবাসা। কথা ছাড়াই যেটা সবচেয়ে গভীর হয়ে ওঠে।”


আর ঠিক তখন, পেছনের গাছের পাতায় জমে থাকা বৃষ্টি একফোঁটা করে ঝরতে থাকে।যেন সেইসব অনুভব, যেগুলো শব্দ ছাড়াই সবকিছু বলে দেয়।


-written by ©thesudipbiswas





Post a Comment

0 Comments