বুবু ছিল খুব চঞ্চল আর মিষ্টি মেয়ে। তার বয়স মাত্র ছয়, কিন্তু তার প্রশ্নের শেষ ছিল না। বাবা নিখিলবাবু ছিলেন একজন ব্যস্ত মানুষ, অফিস আর দায়িত্ব সামলাতেই দিন কেটে যেত। তবুও, প্রতিদিন রাতে তিনি সময় বের করে বুবুকে গল্প শোনাতেন।
নিখিলবাবু যখন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরতেন, তখন দরজার সামনে বুবু অপেক্ষা করতো। দৌড়ে এসে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলতো, “বাবা, আজ তুমি আমার জন্য কি এনেছো?”
নিখিলবাবু মুচকি হেসে বলতেন, “তোমার জন্য আমার ভালোবাসা এনেছি!” তারপর কখনো একটা চকোলেট, কখনো ছোট্ট একটা গল্পের বই বা একটা সুন্দর ফুল তুলে দিতেন বুবুর হাতে।
বুবুর মা হাসতে হাসতে বলতেন, “তুমি তো বাবার রাজকন্যা!”
আর বুবু গর্ব করে বাবার গালে হামি খেয়ে বলতো, “আর বাবা হল আমার রাজা!”
একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পর বুবু দেখলো, বাবা এখনো আসেননি। ফোন করতেই বাবা বললেন, “আজ ফিরতে দেরি হবে মা, অনেক কাজ আছে।”
সেইদিন রাতে ঘুমানোর সময়ও বাবা এলেন না। বুবু মন খারাপ করে বললো, “বাবা, তুমি কি আমায় ভুলে গেলে?”
পরদিন সকালে বাবার মুখটা দেখে বোঝা গেলো, তিনি খুব ক্লান্ত। তবুও, বুবুর মন খারাপ দেখে নিখিলবাবু বললেন, “চলো, আজ তোমার জন্য একটা বিশেষ উপহার আছে!”
বুবু খুশি হয়ে বললো, “কি আছে বাবা?”
নিখিলবাবু বুবুর হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলেন। বাইরে ছিলো এক অপূর্ব সকাল — সোনালি আলো, পাখির ডাক আর হালকা বাতাস। বাবা বললেন, “এই যে, আজ তোমার জন্য একটা গোটা সকাল নিয়ে এলাম! শুধু তুমি আর আমি!”
সেইদিন বুবু আর তার বাবা একসঙ্গে হাঁটলো, গল্প করলো আর হাসলো। নিখিলবাবু বুঝতে পারলেন, কাজের চেয়ে বড় কোনো দায়িত্ব নেই কিন্তু মেয়ের হাসিটা ধরে রাখাটাও জরুরী। আর বুবু বুঝলো, বাবা হয়তো দেরি করতে পারেন, কিন্তু তাকে ভুলে যান নি ।
সেদিন সন্ধ্যায় মা যখন বুবুকে বললেন, “তুমি তো বাবার রাজকন্যা!”
বুবু হেসে বললো, “আর বাবা আমার রাজা, যে গোটা সকাল আমাকে এনে দিতে পারেন!”
-written by ©thesudipbiswas
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box