বুবু তখন হাইস্কুলে পড়ে। মনের মধ্যে বাইরের জগৎ সম্বন্ধে এতো কৌতূহল ছিল যে, ক্লাসরুমের ব্লাকবোর্ডের চেয়ে, পথের মানুষদের বেশি লক্ষ্য করতো। তার স্কুলের পাশে একটা ভগ্নপ্রায় বাড়ি ছিল। বেশ কয়েকদিন ধরে সে লক্ষ্য করছিল যে, সেখানে একজন অতিবৃদ্ধা ঠাকুমা এসে বসবাস করছেন।
সে প্রতিদিন দেখতো যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটা সুন্দর গাড়ি ঐ বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়াতো এবং এক সম্ভ্রান্ত ঘরের দম্পতি ঐ গাড়ি থেকে নেমে এসে, ঐ ঠাকুমাটির হাতে কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়ে চলে যেত। ঠাকুমাটি দুইহাত তুলে তাদেরকে আশির্বাদ করতেন। সেটি দেখে তার ভীষণ ভালো লাগতো এবং সে মনে করতো যে, সমাজে ভালো মানুষের কোনো অভাব নেই। কেউ হয়তো এই বৃদ্ধা মানুষটিকে জীবনের শেষ বেলায় ত্যাগ করেছেন, কিন্তু এই সব সমাজ-সচেতন মানুষের জন্য মনুষ্যত্ব এখনো টিকে আছে। তখন সে মনে মনে ঠিক করে যে, সে যখন বড় হবে, তখন সেও এই রকম একজন মানুষের মতো মানুষ হবে এবং এই সব অসহায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে থাকবে এবং যথাসম্ভব সেবা করবে।
সামনে গ্রীষ্মের ছুটি, তাই সে ভাবলো যে ঠাকুমাটির সঙ্গে একটি বার দেখা করে যাবে। সামান্য আলাপচারিতার পর যখন সে বললো, "কাল থেকে আমাদের ছুটি, সামনের কয়েকটি দিন দেখা হবে না"। তখন ঠাকুমাটি বললেন, "রাস্তার ঐ পাশের ছোটদের স্কুলটি কি ছুটি থাকবে"। বুবু বললো, "হ্যাঁ, আমাদের, ছোটদের সকলেরই কাল থেকে গরমের ছুটি শুরু, পুরো একমাস থাকবে"। বুবুর কথা শুনে ঠাকুমাটি একটু চুপ করে গেলেন। বুবু মনে মনে ভাবলো যে, তারা সবাই এখন আসবে না বলে হয়তো ঠাকুমাটির একটু মন খারাপ করেছে। বুবু বললো, "চিন্তা কি, এই একটা মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে"। ঠাকুমাটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, "স্কুল ছুটি থাকলে আমার ছেলে এদিকে আর আসবে না। আমার নাতি-নাতনি তোমাদের ঐ পাশের ছোটদের স্কুলে পড়াশোনা করে। আমার ছেলে এবং বৌমা প্রতিদিন অফিস যাবার সময় আমাকে একটা প্যাকেটে করে খাবার দিয়ে যায়। তাই ভাবছি যে এই কয়েকটি দিন আমি কি করবো"।
সেদিন জানিনা কেন, বুবু যেন পাষাণের মতো হয়ে গিয়েছিল এবং তার চোখ থেকে অঝোরে জল পরছিল এবং সেইদিন সে স্থির করে নিয়েছিল যে, "সে কোনোদিন এতো বড় হবো না"।
-written by ©thesudipbiswas
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box