বুবুর রান্না-রান্না খেলা


বুবু তখন বেশ ছোট, বছর তিন হবে। একদিন হঠাৎ সে তার বাবাকে বলে উঠল, যে তার খুব খেলতে ইচ্ছে করছে এবং সে এখনই তার বাবার সঙ্গে খেলা করবে। বেশ ভালো কথা যে ছোট্ট মেয়েটি তার বাবার সাথে খেলা করবে, কিন্তু সমস্যা হল যে, সময়টা হলো মধ‍্যরাত। ভোর হতে এখনো অনেক দেরী। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটির চোখে যে একফোঁটা ঘুম নেই। স্নেহময়ী মা অনেক আদর করলেন, কিন্তু মিষ্টি মেয়েটি কোনো কথা শুনবে না। ভীষণ আদরের মেয়ে বুবু, তাই তাকে কোনো ভাবে বকাবকি করা হয় না। বাবা তখন বললেন, বেশ কাল তো রবিবার। অফিস ছুটি আছে, কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু কি খেলা হবে এটাই ছিল বুবুর প্রিয় বাবা নিখিলবাবুর প্রধান বক্তব্য।


মায়ের সঙ্গে বুবু আজ খেলবে না, অগত্যা মা সময় নষ্ট না করে ঘুমাতে চলে গেলেন এবং নিখিলবাবুকে বলে গেলেন যে তোমাদের যা ইচ্ছে করো, আমি আজ আর রাত জাগতে পারবো না।


বাবা যখন তার আদরের মেয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন যে এতো রাতে সে কি খেলতে চায়‌। তখন বুবু বললে, যে সে এখন রান্না-রান্না খেলা করবে। 


ঠিক আছে, বাবা বললেন। 


তার রান্নার সমস্ত খেলনা সামগ্রী তার সম্মুখে রাখা হল এবং বুবু তার ইচ্ছামত একাধিক ব‍্যঞ্জন রন্ধন করতে শুরু করে দিলো।


রান্না শেষে সে আধোআধো কথায় বাবাকে বললে, তুমি অফিস থেকে এসেছো। হাত-মুখ ভালো করে ধুয়ে এসো, আমি খেতে দেবো। নিখিলবাবু মৃদু হাসলেন এবং মেয়ের কথা মতো করলেন।


খেলনার ছোট্ট ছোট্ট থালাতে বুবু খাবার পরিবেশন করে রেখে তো দিলো, কিন্তু এতে নিখিলবাবু কিঞ্চিত অসুবিধার মধ্যে পরলেন। যখন দেখলেন, থালাটি তার হাতে বেসামাল হয়ে যাচ্ছে বারংবার। 


তখন বুবু তার প্রিয় বাবাকে বললে যে, তুমি নিজে হাতে করে খেতে পারবে না। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। মিছিমিছি খাবারের কয়েকটি গ্রাস যখন বুবু তার বাবার মুখে তুলে দিলো, তখন নিখিলবাবুর চোখে হঠাৎই জল চলে এলো। তখন বুবু বললে, তোমার বোধহয় ঝাল লেগেছে একটু জল খেয়ে নাও। এই বলে সে জলের গ্লাসটি তার বাবার সম্মুখে রেখে দিল। নিখিলবাবু অশ্রুসিক্ত চোখে নিজ কন্যার মুখপানে চেয়ে রইলেন এবং খেলনার গ্লাসে ভরা জলটি পান করলেন।


সকালবেলা যখন নিখিলবাবুর জলখাবারের ব‍্যবস্থা করা হল, তখন বুবুর মা দেখলেন যে নিখিলবাবু আজ বেশ অন‍্যমনস্ক হয়ে আছেন। রবিবার ছুটির দিন, সাপ্তাহিক বাজারের কোনো তোড়জোড় নেই। শরীরটা ঠিক আছে তো। কাছে গিয়ে তিনি দেখলেন যে নিখিলবাবুর চোখে জল। 


স্বামীর এই অবস্থা দেখে স্ত্রীর মনে চিন্তা আসা স্বাভাবিক। কারণ জানতে চাওয়ায় নিখিলবাবু বললেন যে কাল বুবুর সঙ্গে রান্না-রান্না খেলা খেলতে গিয়ে তিনি তাঁর মাকে ভীষণভাবে অনুভব করলেন। স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে এলে, নিখিলবাবুকে তাঁর মা হাতে করে ঠিক এমনই করে খাইয়ে দিতেন। কতোটা আদর, কতোটা অনুভূতির সংমিশ্রণ ছিল প্রতিটি গ্রাসে, তা বাক‍্যে বোঝানো সম্ভব নয়। কিন্তু আজ আর তিনি জীবিত নন। খুব কম বয়সে মাতৃহারা হয়েছিলেন নিখিলবাবু। আজও তিনি তার মাকে অনুভব করেন, তার প্রিয় মেয়েটির মধ্যে। হয়তো তারজন্যই বুবু দুষ্টুমি করলেও তিনি বকা দিতে পারেন না।


কারণ, মা আর মেয়ের মধ্যে কোনো প্রকার পৃথকীকরণ হয় না, হতে পারে না। এমনটাই নিখিলবাবুর চিন্তাধারা।


-written by ©thesudipbiswas




Post a Comment

0 Comments