বুবুর স্বপ্ন




আগামীকাল বুবুর জন্মদিন। তাই আজ তার ভীষণ আনন্দ। বেশ কয়েকদিন ধরেই তার বাড়িতে বিভিন্ন প্রকার আয়োজন চলছে। কাল যে তার বারো বছর বয়স পূর্ণ হবে। তার ইচ্ছা যে কাল সকালে তাকে সকলে মিলে একে একে শুভেচ্ছা জানাবে। তাই ছোট্ট মেয়েটি ঠিক করেছে আজ সে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরবে। 

ঘুম থেকে খুব সকালে উঠেই সে শুনতে পারছে যে বাড়িতে সানাই বাজছে, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে বেজেই চলেছে। কিন্তু কেউ তো তাকে তার জন্মদিনের আজ কোনও প্রকার শুভেচ্ছা জানাচ্ছে না। তবে কি এক রাতের মধ্যে সকলেই তার জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়েছে। সে তার ঘরের বাইরে বেরিয়ে জানতে পারে যে আজ তার বিয়ে।  

“আমার বিয়ে”, “কিন্তু আমি তো তার কিছুই জানি না”। “কার সাথে, কে ঠিক করলো,” কিন্তু কেউ তার প্রশ্নের কোনও প্রকার উত্তর দিল না। সে বিচলিত হয়ে উঠল, এদিকওদিক পাগলের মতো ছুটতে লাগল।    

চারিদিকে লোকজনের আনাগোনা। পরিচিত কাউকে দেখে সে তার বিয়ের কারণ জানতে চাইলে, প্রত্যেকে ছোট্ট মেয়েটিকে একটি কথাই বলে যে, অনেক দিন আগেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, তাকে বলার প্রয়োজন বোধ করা হয়নি।

তাকে বাড়ির মহিলারা সকলে মিলে উলুধ্বনি দিয়ে অন্দরমহল নিয়ে গেল এবং বিবাহের প্রারম্ভিক কাজকর্ম শুরু করে দিলে। দূর থেকে সে তার প্রিয় বাবাকে দেখতে পেয়েছে, তিনি যে আজ ভীষণ ব্যস্ত, কিন্তু মা কোথায়। ছোট্ট  মেয়েটির সুন্দর নয়নজোড়া যে তার মাকে খুঁজে পাচ্ছে না।   

বুবু যেন হটাৎ করে আজ পাথর হয়ে গেল। পরিচিত-অপরিচিত কতো লোকজন আজ তার বাড়িতে। যথাসময়ে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বুবুর মা কোথায়, তাকে তো দেখা যাচ্ছে না। বুবুর যে চোখ দিয়ে অঝোরে জল পরতে লাগল। মায়ের আঁচলের সাথে তার জীবন শুরু কিন্তু আজ সেই আঁচল যে আজ তার সহায় নেই।সব কিছু তার চোখের জলের আড়ালে চলতে লাগল কিন্তু যখন সিঁদুরদানের সময় এলো তখন সে খুব জোড়ে মা বলে চিৎকার দিল আর তৎক্ষনাৎ মূর্ছা গেল।  

যখন তার চেতনা ফিরল, বুবু দেখল যে, সে তার মায়ের কোলে দিব্যি শুয়ে আছে এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। মা কারণ জানতে চাইলে সে বলে, “আমি বিয়ে করব না”। ছোট্ট মেয়েটি অস্থির হয়ে উঠে পরলো নিমেষের মধ্যে। সে বাইরে বেরিয়ে এলো কিন্তু বাইরে তো কোনও মানুষ তো দূরের কথা, কোনও প্রকার শব্দও তো সে শুনতে পারছে না। সে এদিক-ওদিক দৌড়ে দেখল কিন্তু কেউ তো নেই। সে মা কে তার বিয়ের কথা বলায় মা প্রথমে কিছুটা অবাক হলেন এবং হাসতে লাগলেন।  আর বললেন, “কেন কি হয়েছে, এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেব কেন, তোমাকে যে অনেক বড় হতে হবে। মানুষের মতও মানুষ হতে হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে হবে”। মা এর কথা শুনে বুবু মাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল এবং খুব জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগল। মা তাকে বিভিন্ন ভাবে আদর করলেন এবং বললেন যে এবার তাড়াতাড়ি উঠে পরতে, আজ যে তার জন্মদিন। তার বাবা তার রাজকুমারী কে দেখার জন্য অধীর হয়ে বাইরে বসে আছে। তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া হবে। মা এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন যে তার প্রিয় মেয়েটি একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছে।


সময়টা এখনকার বলে হয়তো এটা আমাদের কাছে আজ বাজে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু একটা সময় এমন ছিল যখন এটি বাস্তবে পরিণত হতো প্রতিটি মেয়ের জীবনে। যা ভাবলে আমাদের গায়ে আজ কাঁটা দিয়ে উঠে।

-written by ©thesudipbiswas






Post a Comment

0 Comments